বরগুনার বেতাগীতে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতন ও গোপনে ধারণ করা তার ভিডিও সামাজিক যোগাযোযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় এবং থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঝোপখালী গ্রামের বাসিন্দা মো: রিপন বেপারীর ছেলে অয়ন বেপারী (২০) একই এলাকার প্রেতিবেশি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ঐ শিক্ষর্থীর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলো। অয়নের চাচীর বসত ঘর পাশাপাশি হওয়ায় পরিবারের অজান্তে মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে সেখানে সময় কাটাতো।
ঘটনার দিন গত ১৫ মার্চ দুপুর পৌনে বারোটার দিকে অয়নের চাচী ছবি বেগম শিক্ষার্থীকে আচার খাওয়ার কথা বলে ডেকে নেয়। এক পর্যায় ছবি বেগম কলস হাতে করে বাহিরে পানি আনতে বের হন। এই সূযোগে অয়ন চাচীর ঘরে ঢুকে কুপ্রস্তাব দেয়। প্রলোভনেও রাজী না হওয়ায় ভয়ভীতি দেখিয়ে এক পর্যায় জোরপূর্বক তাকে চাচীর ঘরের ভেতরে নিয়ে নির্যাতন করে এবং কাউকে না বলার জন্য প্রাণনাশের ভীতি প্রদর্শন করে এবং কৌশলে তার ভিডিও ধারণ করে রাখেন।
শিক্ষার্থীর পারিবারিক সূত্র জানায়, এর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পর এরই মধ্যে গত ১৫ আগষ্ট অন্য জায়গা থেকে শিক্ষার্থীর বিয়ের প্রস্তাব আসলে বর ও পাত্রীপক্ষ বিয়ে সম্মত হয়ে প্রাথমিকভাবে পাত্রীকে নাক ফুল পড়িয়ে যান। পাত্রীর বয়স কম হওয়ায় পরবর্তীতে এক বছর পর পাত্রীকে বরের বাড়ীতে উঠিয়ে নেওয়ার সময় ধার্য করেন।
নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর স্বজন ও স্থানীয়দের অভিযোগ এ খবরপেয়ে গত ২৬ আগষ্ট বিকেলে অয়ন ও তার চাচী ছবি বেগম গোপনে ধারণ করা ঐ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আত্মীয়স্বজনের ম্যাসেঞ্জারে পাঠায়। ভিডিও প্রকাশের পর শিক্ষার্থী বিষয়টি প্রাথমিকভাবে তার মায়ের কাছে খুলে বলে।ভুক্তভোগীর বাবা অভিযোগ করেন,‘আমার মেয়ের যাতে কোথাও বিয়ে না হয় এ জন্য পরিকল্পিতভাবে অয়ন ও তার চাচী এঘটনা ঘটায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দিলেও এখন বিয়ের প্রস্তাবে তারা রাজী নয়। শুধূ আমার ও মেয়ের সর্বনাশ ও সম্মান হানির জন্য ভিডিও ছাড়ানো হয়। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের কাছে আমরা অসহায়।’
এ বিষয়ে শিক্ষার্থীর মা বাদী হয়ে গত ২৭ আগষ্ট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে যুবক অয়নের বিরুদ্ধে বেতাগী থানায় একটি মামলা করেন। মামলার পর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো: মিজানুর রহমান বলেন,‘মামলার পর সেখানে সরজমিনে গিয়েছিলাম প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। আসামী পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
বেতাগী থানার অফিসার ইনচার্জ মো: মনিরুজ্জামান বলেন,‘মামলাটির তদন্তধীন রয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ভিকটিমকে বরগুনায় হাসপাতালে পাঠানো হয়। রিপোর্ট পেতে আরও দুই-তিন মাস সময় লগবে। তবে অভিযুক্তকে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।’
এদিকে এঘটনায় এলাকায় শিক্ষার্থী ও স্থানীয় সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। যে কোন সময় তারা ফুসে উঠতে পারে। এ ঘটনায় স্বজন ও এলাকাবাসী অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে তার কঠোর শাস্তির দাবি করেন।