স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও ফসল রক্ষায় বরগুনার আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের রায়বালা গ্রামের বিবিসি ইটভাটি বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে আকরাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসা সংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বিবিসি (বিসমিল্লাহ ব্রিকস) ইটভাটির কারণে এলাকার অন্তত পাঁচ শত একর তিন ফসলি জমি, গাছপালা, জীববৈচিত্র্য, প্রাণিসম্পদ ও গ্রামীণ সড়ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৭ সালে আব্দুল হান্নান মৃধা ফসলি জমির ওপর বিবিসি ইটভাটি স্থাপন করেন। কৃষকরা অভিযোগ করেন, ইটভাটি নির্মাণের পর থেকে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে গেছে, ফলে আগের মতো ফসল উৎপাদন হচ্ছে না। ওই ইটভাটির তিন শ’ গজের মধ্যে রায়বালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এতিমখানা ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে।
আইন অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা, কৃষিজমি বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটি স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু আইন লঙ্ঘন করে সেখানে ইটভাটি চালু রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় জাহাঙ্গির আলমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নাশির উদ্দিন, কবির গাজী, শাহীন প্যাদা ও খোকন হাওলাদার প্রমুখ। বক্তারা বলেন, ইটভাটির কারণে জমিতে আগের মতো ফলন হচ্ছে না, গাছে ফল ধরছে না এবং শিশুদের মধ্যে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। তারা বরগুনা জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাছে দ্রুত ইটভাটি বন্ধের দাবি জানান।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, তিন দিক ঘেরা ধানক্ষেতের মধ্যে বিবিসি ইটভাটির কার্যক্রম চালু রয়েছে।
রায়বালা গ্রামের কৃষক কবির গাজী বলেন, “ইটভাটির কারণে আমাদের ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আগের মতো ফসল ফলছে না। পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
স্থানীয় নাশির উদ্দিন ও খোকন হাওলাদারও একই অভিযোগ করে বলেন, এলাকার অন্তত পাঁচ শত একর ফসলি জমি, জীববৈচিত্র্য ও সড়ক নষ্ট হচ্ছে। প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে বিবিসি ইটভাটির মালিক মো. হান্নান মৃধা বলেন, ঝিকঝ্যাক প্রযুক্তির ইটভাটিতে স্বাস্থ্য বা পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না। প্রয়োজনীয় সব ছাড়পত্র নিয়েই ইটভাটি স্থাপন করেছি। শত্রুপক্ষ আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রাসেল বলেন, বিবিসি ইটভাটির জন্য কৃষি অফিস থেকে কোনো প্রত্যয়ন দেওয়া হয়নি। কৃষিজমিতে ইটভাটি স্থাপন করায় জমি ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
বরগুনা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হায়াত মাহমুদ রকিব বলেন, পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন স্থানে ইটভাটি স্থাপন করা যায় না। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, সরকারি নিয়মবহির্ভূতভাবে স্থাপিত কোনো ইটভাটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।