বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাষ্ট্রের সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্যই একটি নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
সংস্কারের প্রস্তাবগুলোকে বাস্তবায়ন করতে হলে, সবার আগে একটি নির্বাচিত সরকার দরকার-এ কথা উল্লেখ করে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘সংস্কারের প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্যই সবার আগে প্রযোজন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নেওয়া আর নির্বাচনের মাধ্যমে যাদের জনগণ দায়িত্ব দেবে, সংস্কারের কাজ তারাই শুরু করতে পারবে। তারেদ এটি শুরু করতেই হবে।’
আজ রোববার বিকেলে কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির উদ্যোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের শ্যামপুরের কদমতলী বালুর মাঠে আয়োজিত এক কর্মশালায় লন্ডন থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তারেক রহমান এ কথা বলেন।
বিএনপি সব সময়ই সংস্কারের পক্ষে- উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা আজকে সংস্কারের কথা বলছেন, তাদের উদ্দেশ্যে আমরা বলতে চাই- সংস্কারের পক্ষে সবচেয়ে আগে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। প্রায় আড়াই বছর আগ থেকেই বিএনপি রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে দলীয়ভাবে প্রক্রিয়া শুরু করে। এখন অনেকেই সংস্কারের কথা বলছেন। দেশের মানুষও সংস্কার চায়। তাই সংস্কারকে যত দ্রুত বাস্তবায়ন করা যাবে, দেশকে ও দেশের মানুষকে তত দ্রুত আমরা বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারব।’
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আজকে আশপাশে শুধু শোনা যায় সংস্কার, সংস্কার আর সংস্কার। এই সংস্কারের প্রস্তাব বিএনপিই জনগণের কাছে সবচেয়ে আগে উপস্থাপন করেছে। ভিশন-২০৩০ দেওয়ার মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০১৬ সালে এই সংস্কাররের প্রস্তাব দিয়েছেন। এরপর এটিকে আবার পর্যালোচনা করে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে সাম্যঞ্জস্য রেখে আমরা প্রায় আড়াই বছর আগে ফের ৩১ দফা উপস্থাপন করেছি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সংস্কারের কথা বলে যদি নির্বাচন প্রক্রিয়া দেরি হয়, সংস্কার-সংস্কার করে আমরা সংস্কারের আলোচনা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করতে থাকি, তাহলে যেই স্বৈরাচারকে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ সম্মিলিতভাবে এদেশ থেকে বিতাড়িত করেছে, সেই স্বৈরাচার সুযোগ পেয়ে আবার দেশের মানুষের কাঁধে চেপে বসবে।’
সমাজের ওই সব বিজ্ঞ ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনারা যারা সংস্কারের কথা বলছেন, তাদের সকলের কাছে রাজনৈতিক দলের অবস্থান থেকে আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, সংস্কার সংস্কার বক্তব্য রেখে এই আলাপ দয়া করে দীর্ঘায়িত করবেন না। কারণ আপনারা সংস্কারের আলাপ যত দীর্ঘায়িত করবেন, দেশ ততবেশি সংকটের মুখে পড়বে। আপনারা সংস্কার আলাপ যত দীর্ঘায়িত করবেন, ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে তত ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পাবে।’
তারেক রহমান বলেন, কোনো কোনো ব্যক্তি বলেন যে- ‘নির্বাচন হলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে?’ আমি বলি- সাথে সাথে সব সমস্যার সমাধান হবে না। কিন্তু নির্বাচন হলে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের মাধ্যমে, জনগণের রায়ের মাধ্যমে যেই দল যেই ব্যক্তি বা যারা দেশ পরিচালনার সুযোগ পাবে, তখন সমস্যার যে জট, সমস্যার যে গিট্টু সেগুলো আস্তে আস্তে খোলা যাবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের কাজ একটি, লক্ষ্য একটি, কথা একটি- দেশ পুনর্গঠন করতে হবে। দেশ গড়ে তুলতে হবে। দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এটিই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা ও শপথ। যেকোনো মূল্যে দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, ঐক্য ছাড়া কোনো কাজে আমরা সফল হতে পারব না।’
নেতা-কর্মীদের প্রতি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আসুন আজকের এই কর্মশালার মাধ্যমে আমার দলের নেতা-কর্মী এখানে যারা উপস্থিত আছেন, সকলে মিলে আজকে আমরা প্রতিজ্ঞা গ্রহন করি যে, বাংলাদেশের মানুষ আমাদেরকে সেই সুযোগ দিলে রাষ্ট্র পরিচালনা আমরা প্রত্যেকে যে যার অবস্থান থেকে যেই সংস্কারের ওয়াদা আমরা জনগণের সামনে দিয়েছি, আমাদের প্রত্যেকের অবস্থান থেকে সেই ওয়াদা সর্বোচ্চ পুরনে চেষ্টা করব। ইনশাআল্লাহ!’
ঢাকা মহানগর দক্ষিনের উদ্যোগে শ্যামপুরের কদমতলীর বালুর মাঠে ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা হয়। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধান অতিথি তারেক রহমান।
এই কর্মশালায় মহানগর দক্ষিণের ২৪টি থানার বিএনপিসহ ১১টি অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেন। দলীয় বক্তব্যের আগে কর্মশালায় রাজধানীর যানজট, পরিবেশ দূষণ, স্বাস্থ্যসেবা, নারীর ক্ষমতায়সহ বিভিন্ন বিষয়ে কয়েকজন নেতা-কর্মীর প্রশ্নের জবাব দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় কর্মশালায় বিএনপি’র বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আলহ্বাজ সালাহউদ্দিন আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন বক্তব্য রাখেন।