রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
মুরাদনগরে পুটি মাছ কাটা নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন নেতা নয় জনগণের কামলা হয়ে থাকতে চাই- কায়কোবাদ বিডিআর হত্যাকাণ্ডবিষয়ক তথ্য চেয়ে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের গণবিজ্ঞপ্তি বিশ্বে পূর্ব শত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে : আজাদ মজুমদার পার্বত্য উপদেষ্টার সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতসহ চার বিদেশি প্রতিনিধির সাক্ষাৎ নান্দাইলে যুগের হাওরে পুলিশ ডিউটি বক্সটি সংস্কার চায় এলাকাবাসী প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে কাতারে যাচ্ছেন চার নারী ক্রীড়াবিদ ইসলামাবাদের সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে বাংলাদেশ অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান চায় পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানালো যুক্তরাষ্ট্র

পেঁয়াজ চুরি ঠেকাতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে কৃষকরা

দিপংকর মন্ডল, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি:
  • আপলোডের সময় : সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ৫৮৪৭ বার পঠিত

পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রতিবাদে দেশের মানুষ পেঁয়াজ কেনা কমিয়ে দিলে দাম কমাতে বাধ্য হয় ব্যবসায়ীরা। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৬০-৭০ টাকা কমে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে কিছুটা স্বস্তি ফিরে ভোক্তাদের মাঝে।

পেঁয়াজের দাম কমে ক্রেতাদের মাঝে স্বস্তি ফিরলেও আতঙ্ক কমেনি কৃষকদের। ক্ষেত থেকে চুরি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় দিন পার করছেন মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের পেঁয়াজ চাষীরা। এরই মধ্যে কয়েক জায়গায় ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ চুরির খবরও পাওয়া গেছে। ফলে পেঁয়াজ চুরি ঠেকাতে পেঁয়াজের ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন কৃষকরা।

জানা গেছে, ভালো দামের আশায় জমিতে আগাম জাতের পেঁয়াজের বীজ রোপণ করেছিলেন উপজেলার অনেক কৃষক। এখন পেঁয়াজের আকার বড় হয়ে উঠেছে। আর ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে পেঁয়াজ তোলার উপযোগী হয়ে উঠবে। তবে বর্তমানে পেঁয়াজের বাজার ভালো হওয়ায় এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেতে হানা দিতে শুরু করেছে চোরের দল। তাই চুরি ঠেকাতে রাত জেগে পেঁয়াজ ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন কৃষকরা।

বিশেষ করে উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বাহিরচর গ্রামের পেঁয়াজচাষীরা তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে পালাক্রমে ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন। ক্ষেতের পাশে ছোট ছোট অস্থায়ী টং ঘরের মতো ঝুপড়ি নির্মাণ করেছেন। সকালের সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত পেঁয়াজ ক্ষেতের সেই ঝুপড়িতেই নির্ঘুম রাত কাটান তারা।

নিজের পেঁয়াজ ক্ষেত পাহারা দেওয়া বাহিরচর গ্রামের কৃষক মঙ্গল মনি দাস বলেন, আমি এ বছর ৪২ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। কয়েকদিন আগে আমার পাশের ক্ষেত থেকে এক কৃষকের অনেক পেঁয়াজ চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা। এরপর থেকেই আমরা রাত জেগে ক্ষেত পাহারা দিচ্ছি। এখন পেঁয়াজের আকার বড় হলেও তোলার উপযোগী হয়নি। আর ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে পেঁয়াজ তোলার উপযোগী হয়ে উঠবে। কিন্তু চোরের ভয়ে এখনই আমাদের পেঁয়াজ তুলল ফেলতে হচ্ছে। সঠিক সময়ে তুলতে পারলে আমার এই জমিতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ মন পেয়াজ হতো কিন্তু চুরির ভয়ে আগে ওঠানোর কারনে ৩৫ থেকে ৪০ মন পেঁয়াজ হবে। কৃষক মঙ্গল মনি দাসের মতো একই কথা জানিয়েছেন বাহিরচরের আরো অনেক পেঁয়াজচাষী।

একই এলাকার কৃষক মো. হারুনুর রশিদ বলেন, আমি এবার মোট ৪০ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। আমার ৪ শতাংশ একটি জমির ১ শতাংশ পেঁয়াজ চুরি হয়েছে। চোরের ভয়ে দ্রুত পেঁয়াজ তুলে ফেলতে হচ্ছে। পেঁয়াজ আরো কিছুদিন পরে তুলতে পারলে ভালো হতো। কিছুদিন আগে রাতে আমার পাশের জমি থেকে পেঁয়াজ চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা।

তিনি আরও বলেন, চুরির বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্যকে জানানো হলে তিনি সবাইকে পাহারা দিতে বলছেন।

কৃষক লাল খান এর ছেলে আ. মালেক বলেন, আমরা ৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছি। আমাদের প্রায় ৪-৫ শতাংশ জমির পেঁয়াজ চুরি হয়ে গেছে। চুরি হওয়ার পরে আমরা রাত-দিন পাহারা দিচ্ছি। চোরের ভয়ে আমাদের পেঁয়াজ উঠিয়ে ফেলতে হচ্ছে। পেঁয়াজ তোলার উপযোগী না হলেও চুরির ভয়ে অপরিপক্ক অবস্থায় পেঁয়াজ তুলে ফেলতে বাধ্য হচ্ছি।

বাহিরচর গ্রামের মামুন রহমান জানান, পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় রাতের আঁধারে এমনকি দিনদুপুরেও ক্ষেতে চোরের ভয়ে শঙ্কিত পেঁয়াজচাষীরা। পেঁয়াজের দাম বাড়লেই পেঁয়াজ চুরির ঘটনা ঘটে। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে গাছের গোড়ায় পেঁয়াজগুলো পরিপক্কতা পাবে। কিন্তু চুরির ভয়ে অনেক কৃষক অপরিপক্ক পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছেন।

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য আ. কুদ্দুস আলী বেপারী পেঁয়াজ চুরির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি পেঁয়াজ চুরির ঘটনা জানার সাথে সাথেই কৃষকদের যার যার ক্ষেত পাহারা দিতে বলি। পাহারা চলমান রয়েছে। এখন আর চুরি হচ্ছে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান খান বলেন, এ অঞ্চলের জমি পেঁয়াজ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এখানে পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। এ বছর উপজেলায় ৮৫০ হেক্টর জমিতে কন্দ পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে। এখানকার কৃষকরা পেঁয়াজ চাষে লাভবান হবেন।

এ বিষয়ে হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ্ নুর এ আলম জানান, ক্ষেতে পেঁয়াজ চুরি ঠেকাতে সম্মিলিত প্রতিরোধের উদ্যোগ নেয়া হবে এবং কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..